Header Ads


  • অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি বাস্তবায়নে আর কত দিন!



    পর্ব-১:

    অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি বাস্তবায়নে আর কত দিন  অপেক্ষা করতে হবে!

     আতিকুর রহমান: সম্প্রতি সিডনীতে বাংলাদেশী সিনিয়র সিটিজেন অব অষ্ট্রেলিয়ান (বিএসসিএক) নামক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেছে। এ নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে আমাদের প্রশান্ত পাড়ের দেশ অষ্ট্রেলিয়াতে আসা বাংলাদেশীদের একাংশ ইতিমধ্যেই সিনিয়র সিটিজেন এ অর্ন্তভূত্ত হয়েছেন। এ সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। অবসর কালীন সময়ে এ সিনিয়র সদস্যরা নিজ আত্বীয়-স্বজনদের সাথে সময় কাটানোর প্রয়াসে মাতৃভমি বাংলাদেশে সময় কাটাতে চাবেন এটাই স্বাভাবিক। প্রচলিত বর্তমান অষ্ট্রেলিয়ার আইনুযায়ী স্বদেশে অবস্থান করলে অবসরকালীন ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন এ সিনিয়র সিটিজেনরা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সিনিয়র নাগরিকরা এ সুবিধা পেলেও বাংলাদেশীরা এ সুবিধা পাবে না। কেননা অষ্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে কোন চুক্তি নেই। এ কার্যক্রম অর্থাৎ এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অষ্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশীদের জনমত সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গঠিত হয় “Australia-Bangladesh Social Security Agreement Support Group (অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি সার্পোট গ্রপ)। একটি আহŸয়ক কমিটির গঠনের মাধ্যমে প্রাথমিক কর্ম শুরু হয়েছিল। সিডনীর অত্যন্ত দক্ষ সংগঠক ড. আনিছুল আফছারকে আহবায়কের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন আতিকুর রহমান, আবুল সরকার, আমীর আজম সরদার, সাদেকুর রহমান, খাজা আবদুস সাত্তার, আবদুস সোবান ও জাকির হোসেন। অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সোশ্যাল সিকিউরিটি চুক্তি সার্পোট গ্রপের উদ্যোগে সিডনীর গ্লেনফিল্ড কমিউনিটি হলে এক কমিউনিটি সভা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল । সিডনীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আশাতিরিক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ গনমান্য ব্যক্তিবর্গ এই কমিউনিটি সভা ও কর্মশালায় অংশগ্রহন করেন । কমিউনিটি সভায় সভাপতিত্ব করেন সার্পোট গ্রপের কো-অর্ডিনেটর ড. আনিছুল আফছার ও পরিচালনা করেন সার্পোট গ্রপের সদস্য জনাব আবুল সরকার। ড. আফছার বলেন, বর্তমান সোস্যাল সিকিউরিটি নিয়মানুযায়ী অবসর ভাতা পেতে হলে অষ্ট্রেলিয়াতে বসবাস করতে হবে। পরবর্তীতে ড. আনিছুল আফছার অষ্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ায় এ গুরু দায়িত্ব দেয়া হয় জনাব আমীর আজম সরদার। Support Group সিডনীর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, বাংলাদেশ হাইকমিশন, অষ্ট্রেলিয়ার সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ থেকে আগত মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং এ চুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

    প্রস্তাবিত অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তিটি কি: মূলত: অষ্ট্রেলিয়ার সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা অন্যান্য উন্নত দেশের থেকে একটু ভিন্ন। এ দেশে সরকার নাগরিকদের বেকার ভাতা ও অবসরকালীন ভাতা সহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে। এ অর্থ সরকার তারঁ সাধারণ তহবিল থেকে প্রদান করে থাকেন যা এ দেশের নাগরিক অধিকার। ডির্পাটমেন্ট অব হিউম্যান সার্ভিসেস এ ব্যবস্থার তত্ত¡াবধান করে থাকে। এখানে যে সব বাংলাদেশী বসবাস করছেন তার নিদিষ্ট পরিসংখ্যান আমরা না পেলেও প্রায় যাট হাজারের উপরে বাংলাদেশী বাস করছেন। এ সংখ্যার প্রায় একাংশ অবসর বয়সের কাছাকাছি। আগামী পাচঁ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অবসরপ্রাপ্ত বাংলাদেশীদের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সোস্যাল সিকিউরিটি নিয়মানুযায়ী অবসর ভাতা পেতে হলে অষ্ট্রেলিয়াতে বসবাস করতে হবে। অর্থাৎ কেউ বাংলাদেশে গিয়ে বসবাস করলে এ ভাতা থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ আমাদের অনেকেই অবসরকালীন সময়টা নিজ দেশে আত্নীয়-স্বজন ব্যাষ্টিত বসবাস করতে ইচ্ছুক। এতে করে জীবন যাত্রার ব্যয়ও কমে যায়। অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তিটি হলে  কেউ বাংলাদেশে থাকলেও অবসরকালীন ভাতা থেকে বঞ্চিত হবে না। অষ্ট্রেলিয়াতে থাকলে যে পরিমান পেনশন ভাতা পাবেন ঠিক সেই পরিমান অর্থ যদি তারা স্বদেশে বসে পান, তাহলে সেটা হবে একটা বিশেষ পাওয়া। পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকারও উপকৃত হবে বিদেশী অর্থ বাংলাদেশে প্রেরন করা এবং খরচের ফলে।

    

    ফাইল ফটো: কর্মশালায় ড. আনিছুল আফছার


    কোন কোন দেশের সাথে এ আন্তজার্তিক সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি রয়েছে: পৃথিবীর অনেকগুলি দেশের সাথে অষ্ট্রেলিয়া সরকারের সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি রয়েছে। অনেক দেশ এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভারত, অষ্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, গ্রিস, আমেরিকা, কোরিয়া, কানাডা, সাইপ্রাস, চিলি, জাপান, মাল্টা, নরওয়ে, নিউজিল্যাল্ড, স্পেন, পোল্যান্ড, পূর্তগাল, ন্যাদারল্যান্ড, জার্মানী, ফিনল্যান্ড প্রমুখ দেশের সাথে এ চুক্তি ইতিমধ্যেই সম্পাদন হয়েছে। সম্পতি আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের সাথে এ চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে।

    প্রস্তাবিত অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তিটি বাস্তবায়িত করবে কে?

    অনেকেই মনে করেন এ চুক্তি বাস্তবায়িত করবে কে? এ চুক্তি হবে অষ্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন যেমন সময় সাপেক্ষ তেমনি রয়েছে জোড় লবিং এর ব্যাপার। কেননা উভয় সরকার যদি স্বচ্ছোয় এগিয়ে না আসে তবে চুক্তি দীর্ঘায়িত হবে নি:সন্দেহে। এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার জন্য গত ২২ শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালে ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৎকালীন মাননীয় হাইকমিশনারের সাথে  অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি সার্পোট গ্রপের ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল সাক্ষাতের মাধ্যমে এ চুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবায়নের বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। মাননীয় হাইকমিশনারের মেয়াদ পূর্ন হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে বেশী দূর এগুতো পারেনি। পরবর্তীতে  হাইকমিশনের বিভিন্ন মাননীয় হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশ থেকে আগত বিভিন্ন উর্ধ্বত্তন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অষ্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে সার্পোট গ্রপের মত বিনিময় হয়। যেহেতু এ চুক্তিটি হবে দু’দেশের সরকারের মধ্যে সেখানে সার্পোট গ্রপ বা বাংলাদেশীদের জোড়ালো কোন ভুমিকা নেই। সেক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। চুক্তির ফলে যেহেতু বাংলাদেশী এবং সরকার লাভবান হবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত বলে আমরা মনে করি।

    চুক্তি বাস্তবায়নে যে সকল কারনে দীর্ঘ সময় নিতে পারে: গ্রীক কমিউনিটিকে প্রায় বিশ বছর এ চুক্তি বাস্তবায়নে অপেক্ষা করতে হয়েছে। সুতারং আমাদের সরকারের তরিত্বৎ তৎপরতায় এ সময় না লাগতে পারে। এ চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময়ের কারনগুলি হতে পারে এরকম: ১. বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়া উভয় সরকারের আগ্রহের অভাব ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব। ২. বাংলাদেশে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা বা সুবিধার অভাব এবং এ  ব্যাপারে উন্নয়নে আগ্রহ না থাকলে। ৩. অষ্ট্রেলিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনের প্রত্যক্ষ ভূমিকার আগ্রহের অভাব হলে। ৪. অষ্ট্রেলিয়ার নির্বাচিত ফেডারেল সাংসদরা যদি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন এবং সাংসদ কর্তৃক পাশ করার আগ্রহের অভাব। ৫. অষ্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি সার্পোট গ্রæপের সময় ও নেতৃত্বের অভাব। দু’ সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, তার আগে যারা এই চুক্তির ফলে লাভবান হবেন, তাদেরকে প্রথমে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে এবং সরকারী পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য কঠিন কাজটি তাদেরই করতে হবে। কারন উভয় সরকারই আমাদের  প্রয়োজনীয়তার কথা নাও উপলদ্ধি করতে পারে।

    অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কিভাবে সার্পোট গ্রপ সহায়তা করতে পারে এ ব্যাপারে অন্যতম উদ্যোক্তা জনাব আবুল সরকার ও প্রাক্তন আহবয়ক ড. আনিছুল আফছারের সাথে আমার নেয়া পূর্বের সাক্ষারটি পূন:প্রকাশ করলাম (অনেকেই এ সাক্ষারটি পড়তে পারেনি যাদের জন্য)-এ পর্বে আবুল সরকার।


    চুক্তি বাস্তবায়নে সকল সংগঠনের অংশগ্রহন করা উচিত--আবুল সরকার

     আবুল সরকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকালীন সময়ে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও অষ্ট্রেলিয়াতে এসে বাংলাদেশের রাজনীতির মোহ আকর্ষন করতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত করেছেন। গত ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে কাউন্সিল পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহন করে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। আবুল সরকার এ চুক্তি সম্পর্কে আমাদের কিছু তথ্য তুলে ধরেন।

    প্রশ্ন: আমাদের কমিউনিটির যারা অবসর নিয়েছেন বা নিবেন তাদের দেখ ভালের জন্য কি কোন সংগঠন রয়েছে কিনা?

    আবুল সরকার: আমার জানা মতে যারা অবসর নিয়েছে বা নিবে তাদের সেবা দানের জন্য বাংলাদেশীদের কোন সংগঠন এখনও গড়ে উঠেনি। এখানে যারা সংগঠন করছে তারা তাদের সাধারন ধারাবাহিক কার্যক্রমগুলি পালন করছে। আমার মনে হয় প্রস্তবাবিত অষ্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি বাস্তবায়নে সকল সংগঠনের অংশগ্রহন করা উচিত।

    প্রশ্ন: এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং পাশাপাশি অষ্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে বিষয়টা তুলে ধরতে হবে। আপনি কি মনে করেন?

    আবুল সরকার: আসলে মনে করার বিষয়টা এ রকম যে, দু’ সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, তার আগে যারা এই চুক্তির ফলে লাভবান হবেন তাদেরকে প্রথমে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে এবং সরকারী পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য কঠিন কাজটি তাদেরই করতে হবে। কারন উভয় সরকারই আমাদের  প্রয়োজনীয়তার কথা নাও উপলদ্ধি করতে পারে। এর জন্য অষ্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সোস্যাল সিকিউরিটি চুক্তি সার্পোট গ্রপকে পূর্নাঙ্গ সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি সকল গনমাধ্যমেরও সহযোগিতা কামনা করছি।















    











    No comments

    Top Ad

    Top Ad

    Post Bottom Ad

    ad728