Header Ads


  • মাহে রমযানের গুরুত্ব ও ফযীলত


     

    মুফতি মাহবুবুল হক: বছরের অন্যান্য মাসের মধ্যে মাহে রমযানের অবস্থান আলাদা। মাসের আছে এমন কিছু বিশিষ্টতা, যা অন্যান্য মাসের নেই। ঐসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যতই চিন্তা করা যায় ততই মাসের মহিমা গুরুত্ব প্রকাশিত হয়। প্রথম বিশিষ্টতা এই যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এমাসের বৈশিষ্ট্য ঘোষণা করেছেন। এটা ঠিক যে, কুরআন মাজীদেআশহুরে হুরুমেরও উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে (তরজমা) ‘মাসের সংখ্যা আল্লাহর নিকট বারো... তন্মধ্যে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। (সূরা তাওবা : ৩৬)।

    চার মাস হল রজব, যিলকদ, যিলহজ্ব মুহাররম। যদিও চার সম্মানিত মাস বলতে এই মাসগুলিই সুবিদিত এবং হাদীসের বর্ণনা অনুসারে এখানে চার মাসকেই বোঝানো হয়েছে। কিন্তু মাসগুলির নাম কুরআন মাজীদে উল্লেখিত হয়নি। এদিক থেকে মাহে রমযান বিশিষ্টতার অধিকারী। মাহে রমযানের নাম উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা এর ফযীলত ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

    شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ

    অর্থাৎ, মাহে রমাযান, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন যা মানুষের জন্য হেদায়েত সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং (যা আসমানী) হেদায়েত সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী (সূরা বাকারা : ১৮৫)। কুরআন মাজীদে হাদীস শরীফে রমযান মাসের ফযীলতগুলো বর্ণিত হয়েছে।আল্লাহ তাআলা এই মাসকে নির্ধারিত করেছেন তাঁর মহিমান্বিত কালাম নাযিলের জন্য, যা জগদ্বাসীর জন্য হেদায়েত এবং হক্ব বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী। আর মোবারক মাসে একটি রজনীকে এমন মর্যাদা মহিমা দান করেছেন যে, তা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। কুরআন মাজীদে লাইলাতুল কদর পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত হয়েছে। আর হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাআইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

    إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة وغلقت ابواب جهنم وصفدت الشياطين

    যখন মাহে রমাযানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯)। এই হাদীস শরীফও সংবাদ দান করে যে, মাসে উর্ধ্ব জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সকল নেয়ামতের স্থান জান্নাতের দরজাসমূহ আল্লাহর আদেশে খুলে দেওয়া হয়। আর চির অশান্তির স্থান জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। যেন পরওয়ারদেগারের আহবান -কে আছ, জান্নাতে যেতে চাও, আমি তাকে জান্নাতে দাখিল করব। কে আছ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চাও, আমি তাকে মুক্তি দান করব। অতএব বান্দার কর্তব্য গুনাহ পাপাচার থেকে পবিত্র হয়ে চিরমুক্তির পরওয়ানা হাসিল করা। বিতাড়িত শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে অন্যায় অনাচারের এক বড় সূত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোটকথা গোটা মাসজুড়ে রহমত মাগফিরাতের ফল্গূধারা প্রবাহিত হয় এবং মুক্তির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে।  মাসের প্রধান ইবাদত হচ্ছে, সিয়াম সাধনা করা।আল্লাহ বলেন

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে রোযা, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা আত্মরক্ষা করতে পার। (গুনাহ থেকে এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ. অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে মাসে উপস্থিত হয় সে যেন মাসভর রোযা রাখে। (সূরা বাক্বারা :১৮৫)।

    অসুস্থ মুসাফির ছাড়া প্রত্যেক বালিগ মুসলিমের উপর সারা মাস রোযা রাখা ফরয। শুধু মাহে রমাযানেরই বৈশিষ্ট্য। বিধান অন্য কোনো মাসে নেই। 

    সূরা বাকারার যে আয়াতগুলিতে রোযা ফরয হওয়ার বিধান এসেছে তাতে চিন্তা করলে দেখা যায়, একদিকে আল্লাহ রোযাকে ফরয করেছেন, অন্যদিকে অপারগতার ক্ষেত্রে অবকাশ দিয়ে বিধানকে সহজ করেছেন। উপরন্তু  দয়াময় মালিক বিষয়ে এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে, বান্দার জন্য তা আর কঠিন থাকেনি, মধুময় হয়ে উঠেছে।

    মাহে রমাযানের দ্বিতীয় বিশেষ ইবাদত তারাবী। বলাবাহুল্য, - আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতেই প্রদত্ত। তবে দয়াময় মালিক তা দান করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর মাধ্যমে এবং রোযার মতো একে ফরয করেননি। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এক রমাযানে দুই বা তিন রাত সাহাবীগণ তারাবীর নামাযে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ইকতেদা করেছেন। অর্থাৎ তারাবীর নামায জামাতে পড়া হয়েছে। কিন্তু পরের রাতগুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে বের হননি। এর কারণ দর্শিয়ে তিনি বলেছেন, তোমাদের অপেক্ষা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম, কিন্তু আমার আশঙ্কা হয়েছে (এভাবে জামাতে তারাবী চলতে থাকলে) তা ফরয করে দেওয়া হতে পারে।

    হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামাযকে আমাদের জন্য অপরিহার্য করেননি তবে তিনি উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ইহতিসাবের সাথে রমযানের রাতে (নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্বকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৯)। ( লেখক বিশিষ্ট আলেম, কলামিষ্ট। প্রভাতের জন্য ঢাকা থেকে পাঠিয়েছেন)

     

     

     

     

     


    No comments

    Top Ad

    Top Ad

    Post Bottom Ad

    ad728