রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত না থাকলেও রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে প্রায় সবার। আর তা যদি হয় এদেশের নির্বাচনে বাংলাদেশীদের অংশগ্রহন। সত্যি কথা বলতে স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাচনে বাংলাদেশীদের সাফল্য কিন্তু কম না। এর মধ্যেই ফেডারেল নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন জনাব শাহ জামান টিটু। স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে জয়লাভ করে বাংলাদেশীদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন অনেকেই। এর মধ্যে সর্বজনাব শাহাদত চৌধুরী, প্রবীর মৈত্র, মাসুদ চৌধুরী, শাহ জামান টিটু, মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, সুমন সাহা প্রমুখ। এ বৎসরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সিটি কাউন্সিল নির্বাচন করোনার জন্য পিছিয়ে আগামী ৪ ডিসেম্বর হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনে বাংলাদেশীদের অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত ক্যাম্বেলটাউন এবং ল্যাকেম্বা (ক্যান্টাবেরী-ব্যাংকসটাউন) এর দিকে নজর সবার। এ এলাকা থেকে লেবার, সরকারী দল লিবারেল, কমিউনিটি ফাষ্ট, স্বতন্ত্র দল কমিউনিটি ভয়েস পার্টি থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থীতারা অংশগ্রহন করবেন বলে জানা যায়। কমিউনিটি ফাষ্ট পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন জনাব আবুল সরকার। জনাব সরকার ২০১২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে স্বল্প ব্যবধানের জন্য নির্বাচিত হতে পারেননি। তবে এর মধ্যে আবুল সরকার কমিউনিটি উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকান্ডে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। বর্তমানে বিডি হাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জনাব আবুল সরকার প্রভাত ডট কমের সম্পাদক আতিকুর রহমানের সাথে একটি সাক্ষাতকার প্রদান করেছেন। সাক্ষাতকারটি নিম্নে তুলে ধরা হল:
আতিকুর রহমান: লকডাউনের এই বন্দী জীবন ক্যামন কাটছে?
আবুল সরকার: দেখুন বন্দী জীবন কখনোই সুখের না। কিন্তু আইনতো মেনে চলতে হবে।তারপরও আমি কমিউনিটির সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি, তাদের কোন সাহায্য সহযোগীতা লাগবে কিনা? ব্যস্ততার মধ্যেই সময় চলে যাচ্ছে।
আতিকুর রহমান: জনাব সরকার নির্বাচনের আর মাত্র নব্বই দিন বাকী। ২০১২ সালে আপনিই প্রথম বাংলাদেশি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন, এরপর ২০১৬ সালে আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। এবার কেন নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন?
আবুল সরকার: ধন্যবাদ। জী, আমিই প্রথম বাংলাদেশী নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঐসময় নির্বাচন করেছিলাম। উদ্দেশ্যে ছিলো বাংলাদেশীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করুক। যদিও ঐসময় সামান্য্য কিছু ভোটের জন্য (১৫১) আমারা জিততে পারিনি, কিন্তু একটি শক্ত নাড়া দিতে পেরেছিলাম। তাছাড়া সঠিক ভাবে ভোট না দেয়ার কারনে আমাদের প্রায় তিনশত তেত্রিশ টা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। না জেতার জন্য এটিও একটি কারন।
আতিকুর রহমান: ২০১২ সালে মাত্র সামান্য কয়েক ভোটে হেরে ২০১৬ সালের নির্বাচনে কেন অংশগ্রহন করেননি?
আবুল সরকার: ধন্যবাদ এই প্রশ্নটি করার জন্য। দেখুন ২০১২ সালে আমার নির্বাচনে আসার পেছনে যে কারন ছিলো সেটি ২০১৬ সালে পুরন হয়েছিল। ২০১২ সালে আমি বলেছিলাম যদি কোন পার্টি এবার কাউকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে আমি নির্দলীয় হলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ২০১৬ সালে একটি পার্টি আমাদের একজনকে মনোনয়ন দিলে আমরা সানন্দে গ্রহন করি। ফলে আমার আর নির্বাচনে অংশগ্রহন করার প্রয়োজন হয়নি।
|
২০১২ সালের নির্বাচনে আবুল সরকারের নির্বাচনী গাড়ী |
আতিকুর রহমান: ২০১২ সালে নিজেই স্বতন্ত্র দল গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন এবার আরও শক্তিশালী আরেকটি দল থেকে কেন অংশগ্রহন করছেন?আবুল সরকার: দেখুন এটি একটি গুরত্বপূর্ন প্রশ্ন। উত্তরটা একটু বড়ই হবে। তবুও সংক্ষেপ করার চেষ্টা করবো। ২০১২ সালে এই এলাকায় বাংলাদেশী ভোটার ছিলো মাত্র তিন হাজার পাঁচশ‘ যা এখন দাড়িয়েছে প্রায় দশ হাজারের কাছে। সঙ্গত কারনেই আমাদের জনপ্রতিনিধির সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ার কথা। যারা সক্রীয় ভাবে বিভিন্ন দল করে স্বাভাবিকভাবেই তারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে পোষন করে। যোগ্যতা ও অন্যান্য মানদন্ডের কাঠিতে তারা পাশ করলেও আভ্যন্তরীণ কারনে তাদের কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য কমিউনিটির অযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিচ্ছে। এটি আমাদের রাজনৈতিক রোডম্যাপ ও ভবিশ্যতের জন্য পিছিয়ে পরার অশনি সংকেত। আর একারনেই আবারো নির্বাচনের মাঠে আসা। আর এবার আমি নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নয়, আমি কমিউনিটি ফার্স্ট পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।
|
বিজ্ঞাপন |
আতিকুর রহমান: এবারের নির্বাচনে নির্বাচিত ও নতুন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন, আপনার নির্বাচনের ফলে কি কোন প্রভাব ফেলবে?
আবুল সরকার: দেখুন এটি একটি অবিভক্ত সিটি কাউন্সিল, যেখানে পনেরজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন।সকল প্রার্থীদের মধ্যে থেকে যে পনেরো জন সর্ব্বোচ ভোট পাবে নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচিত ঘোষনা করবেন। এখানে কোন প্রার্থী সরাসরি অন্য প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগীতা করার সুযোগ নেই। আর তাছাড়া বড় দুটি পার্টির ভোট সংখ্যার পরিমানও সবার জানা আছে। সেই হিসেবেও বর্তমান নির্বাচিত প্রার্থীর পার্টির ভোটেই জয়ের আশা করা যায়। ফলে আমার ভোটারগন আমাকে নির্বাচিত করবেন কমিউনিটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে তাদের সহযোগীতা পাবার কথা বিবেচনা করে। আমিও স্বাভাবিক ভাবেই তাদের পাশে দাড়াবো যখন দরকার হবে।
আতিকুর রহমান: সবকিছু বিবেচনা করে আপনি জয়ের ব্যাপারে কি ভাবছেন?
আবুল সরকার: দেখুন যে কোন প্রতিযোগীতায় জয় পরাজয় থাকবেই। এটা মেনে নিয়েই সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসে আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। তবে কমিউনিটি আমাকে যেভাবে কাছে টেনে নিচ্ছে তাতেই প্রতিয়মান হচ্ছে আমি আশা করতে পারি আমার জয় সুনিশ্চিত।
আতিকুর রহমান: প্রভাত পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনার সাফল্য কামনা করছি। আপনার মুল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আবুল সরকার: আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments