ঘুষ খেলে কি নামাজ হবে!
কি সাংঘাতিক কথা? যারা ঘুষ খায় তাদের অনেকই তো নিয়মিত নামজ পড়ে। শুধু নিয়মিত নামজ পড়েই না, নামজ পড়তে পড়তে হয়তো কপালে দাগও করে ফেলেছে। অনেক ঘুষখোর আছে যাদের মুখে অনেক লম্বা দাড়ি থাকে এবং মাথায় সবসময় টুপি থাকে, ফরজ নামাজ ছাড়াও তারা অনেক অনেক নফল নামজ পড়ে, তাহলে কি তাদের কোন নামাজই হবে না? না এই কথাটা আমি কোন হাদিস থেকে উদ্ধিতি করছি না। আর হাদিসে সরাসরি এভাবে কথাটা আছে কিনা তাও জানি না। আর এই কথাটা আমি কোন মসজিদের ইমাম বা Islamic Scholar এর কাছ থেকেও শুনি নাই। সম্প্রতি এই সাংঘাতিক কথাটা বলেছেন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব জনাব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম একটা মিটিং এ। সেই মিটিংএ স্থানীয় সরকার মন্ত্রীও ছিলেন। সচিব সাহেব নিশ্চয় ঘুষ খান না এবং
উনাকে দেখে একজন সৎ ও ফরহেজগার লোক বলেই মনে হয়। মিটিংএ যাদেরকে তিনি একাথাটা বলেছেন তারা সবাই এল.জি.ই.ডির অনেক বড় বড় কর্মকর্তা, প্রজেক্ট ডাইরেক্টর বা প্রধান প্রকোশৌলী। তার মানে এইসব বড় বড় অফিসাররা বা প্রধান প্রকোশৌলীরা সবাই অথবা অনেকেই ঘুষ খেতে পারে। তিনি তাদেরকে একথাও বলেছেন যে “প্রতিদিন বাসায় গিয়ে আয়নার সামনে দাড়ায়ে ভাববেন যে আমি চোর হিসেবে না ডাকাত হিসেবে বাসায় ডুকলাম”। তার মানে এরা চুরি, ডাকাতি বা দুর্নীতিও করে। “ঘুষ খেলে নামাজ হবে না” - এই কথাটা যদি সরকারের একজন উর্ধ্বতন সচিব না বলে কোন মসজিদের ইমাম সাহেব বলতেন তাহলে হয়তো ঐ ইমাম সাহেবের চাকুরিই থাকতো না, কারন ঐ মসজিদ কমিটির সভাপতিও হয়তো সরকারের একজন বড় অফিসার এবং ঘুষখোর।
ঘুষ খওয়া হারাম একথা সব মুসলমানরাই জানে। আর ইসলামে হারাম মানে হলো যা খাওয়া নিষেধ, করা নিষেধ, দেখা নিষেধ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর হারাম খেলে বা হারাম কাজ করলে গুনাহ/পাপ হবে এবং পরকালে দোজখে যেতে হবে, আগুনে পুড়তে হবে একথাও সব মুসলমানরা জানে। ইসলামে মদ খাওয়াও হারাম, সুদ খাওয়াও হারাম, চুরি করা, ডাকাতি করাও হারাম। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়, একজন মদখোর, সুদখোর, চোর ও ডাকাতকে মানুষ যেভাবে ঘৃনা করে একজন ঘুষখোরকে সেভাবে ঘৃনা করে না। বরং একজন ঘুষখোর বড় অফিসারকে মানুষ অনেক সন্মান করে, আত্মীয়তা করতে চায়, মেয়ে বিয়ে দিতে চায় কারন, মনে করে অতিরিক্ত আয় (extra income) আছে, এমনকি তাদেরকে মসজিদ কমিটির সভাপতিও বানায়। কি বিচিত্র আমাদের সমাজ, কি বিচিত্র আমাদের দেশের মানুষ, কি বিচিত্র আমাদের দেশের মানুষের ধর্ম চর্চা-হারাম টাকায় খাবে, হারাম টাকায় পড়বে অথচ কঠিন ধার্মিক, অনেক সন্মানিত মানুষ।
No comments